আমাদের মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ২,৫৬০টি কম্পিউটার হার্ডডিস্কের সমান। এখন প্রশ্ন হতে পারে, মস্তিষ্কে এতো ধারণ ক্ষমতা থাকার পরেও কেন আমরা সবকিছু মনে রাখতে পারি না?
ভুলে যাওয়ার কারণ কি?
স্মরণশক্তি বাড়ানোর উপায় জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে-
– কম সময় ধরে ঘুমের অভ্যাস স্মরণশক্তিকে দুর্বল করে দেয়
– ডিপ্রেশন বা হতাশা
– অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া
– অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
– একাকীত্ব
– উচ্চ রক্তচাপ
– অ্যালকোহল ইত্যাদি।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়:
দীর্ঘদিন ধরে একাধিক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা বের করতে চেয়েছেন স্মরণশক্তি বাড়ানোর উপায়। খুঁজেও পেয়েছেন কিছু পদ্ধতি। আসুন তাহলে জেনে নিই সেই পদ্ধতিগুলো কী কী:
মেডিটেশন:
একাগ্র মনের কোনো চিন্তার নাম ‘‘মেডিটেশন’’। এটি শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে জাগিয়ে তোলে না, শরীরেরও উপকার করে। আমরা জানি, মানুষের শারীরিক শক্তির অন্যতম উৎস হলো মন। মন যখন শান্ত থাকে, মানুষ তখন তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। আর মনকে স্থির করার সফলতম পদ্ধতি হলো মেডিটেশন (meditation)।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন স্মরণশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যদি এমনটা হয় যে আপনি কোনো কিছু মনে রাখতে পারছেন না, তাহলে মেডিটেশন আপনাকে সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করবে। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করতেন।
তিনি ভারতে গিয়েছিলেন আধ্যাত্মিক জীবনের খোঁজে এবং সেখান থেকেই তার মেডিটেশন চর্চার শুরু। ধ্যানের মাধ্যমে জবস তার নিজের মানসিক চিন্তাধারাকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালনা করতে শিখেছিলেন। যা তার জীবনযাত্রা পরিবর্তনে মূল ভূমিকা পালন করে।
কল্পনা:
ব্রিটিশ লেখক ডমিনিকো ও’ব্রায়েন তার বই “ইউ ক্যান হ্যাভ অ্যান অ্যামেজিং মেমোরি”-তে বলেছেন, ইম্যাজিনেশন বা কল্পনা এবং মেমোরি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আপনাকে জীবনের একটি ঘটনার বর্ণনা করতে বলা হলে প্রথমে আপনি সেটা কল্পনা করবেন তারপর বলবেন। কল্পনা করতে পারলেই কেবল বর্ণনা করা সম্ভব।
তাই নতুন কোনো কিছু পড়ার সময় বিষয়টিকে নিজের মতো করে কল্পনা করার চেষ্টা করুন। কোনো বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে হলেও সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। এতে করে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
মেধাশক্তি বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্যই ভালো নয়, মস্তিষ্কের জন্যও ভালো। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা নতুন স্নায়ু কোষ গঠনে সহায়তা করে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিন: ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন তথ্য প্রক্রিয়া করে এবং স্মৃতি তৈরি করে। তাই প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমানো জরুরি।
সুষম খাদ্য খান: মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি সরবরাহ করার জন্য সুষম খাদ্য খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, এবং ফলিক অ্যাসিড।
নতুন কিছু শিখুন: নতুন কিছু শিখলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয়। তাই নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করুন, কোনো নতুন বিষয়ে বই পড়ুন, বা কোনো নতুন দক্ষতা শিখুন।
সৃজনশীল হতে চেষ্টা করুন: সৃজনশীল কাজ করলে মস্তিষ্কের কল্পনাশক্তি এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ছবি আঁকুন, গান লেখুন, বা কোনো নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন: মানসিক চাপ মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে হ্রাস করতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, বা মেডিটেশন করুন।
এছাড়াও, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে মেধাশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে:
- নিয়মিত ব্রেন টিজিং বা মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন। এতে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয় এবং নতুন স্নায়ু কোষ গঠনে সহায়তা করে।
- সঠিকভাবে পড়াশোনা করুন। নতুন তথ্য মনে রাখার জন্য পড়াশোনা করার সময় বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করুন।
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন। এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান, মদ্যপান, এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ।
মেধাশক্তি বাড়ানোর জন্য ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা জরুরি। নিয়মিত অনুশীলন করলে ধীরে ধীরে মেধাশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
Leave a Reply